স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে না পেরে এবার বসতঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিলেন আপন চাচা। অভিযোগ ওঠে, চাচা আবুল হোসেন শরীফ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের প্রভাব দেখাচ্ছেন।
কাশিপুর ইউনিয়নের কলসগ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল হাকিম শরীফের ছেলে ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের অবসরপ্রাপ্ত গাড়ি চালক নাছিম শরীফ বলেন, তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও নিজের অর্থয়নে তৈরী করা ঘর দখল করার চেষ্টা করে আসছেন চাচা আবুল হোসেন শরীফ ও চাচাতো ভাইরা। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ বৈঠক, থানা পুলিশসহ বিভিন্নভাবে জোরপূর্বক দখল করতে ব্যর্থ হয়ে নিজের অপর্কম আড়াল করতে অবশেষে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর দৃষ্টি আর্কষণ করেন তিনি। যা ছিল চাচা আবুল হোসেনের একটি মনগড়া গল্প কাহিনী। প্রকৃতপক্ষে, নাছিম শরীফের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ওপরে নিজের অর্থয়ানে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ঘর। উক্ত ঘরে মাসহ নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন তিনি। নাছিম শরীফের দাবী, তার পিতা বরিশাল বিভাগীয় টিএনটি অফিসের লাইনম্যান হিসেবে চাকুরীরত অবস্থায় ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুকালীন সময় নাছিম শরীফ ও তার একমাত্র ছোটভাই দুজনেই বেকার থাকায় তার দাফন-কাফনসহ তৃতীয় দিনে দোয়া অনুষ্ঠান পর্যন্ত সমস্ত খরচ অপর তিন চাচা বহন করেন।
নাছিম শরীফ বলেন, তৃতীয় দিন দোয়া অনুষ্ঠান শেষে যাবতীয় খরচের হিসাব নিয়ে পারিবারিকভাবে সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে খরচের টাকার বিপরীতে এক চাচা আমার বাবার ক্রয়কৃত জমি হতে ৮ শতাংশ জমির দলিল নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রায় এক যুগ পর ২০২২ সালে হঠাৎ চাচা আবুল হোসেন শরীফ ঘরের মালিকানাও দাবী করে বসেন। নাছিম শরীফের দাবী, ২০১১ সালে তার বাবা মৃত্যু’র পর ২০১৪ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে গাড়িচালক পদে যোগদান করেন তিনি। বাবার রেখে যাওয়া পুরোনো কাঠের ঘর ভেঙ্গে, নিজের টাকায় পাকা ঘর র্নিমাণ করেন। ওই ঘরে তিনি ও তার ছোট ভাই সহ মাকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ২০১৮ সালে নাছিম শরীফের মা নাছিমা বেগম থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর তিন বছর পর ২০২১ সালে নাছিম নিজেও একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। পরে চাকুরী থেকে অবসরে চলে আসেন। এতে নাছিম শরীফের অসুস্থতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার সুযোগে চাচা মোঃ আবুল হোসেন শরীফ, মোঃ ইসমাইল শরীফ ও ইসমাইল শরীফের দুই ছেলে মনির শরীফ ও মোঃ মামুন শরীফ এবং ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে ঘর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ঘর দখলের পায়তার অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী নাছিম শরীফ নিজের ছোট ভাই , চাচা ও চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মার্চ মাসে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। ২০১৩ সালে অনুর্ধ ১৭ বছর ও এসএসসি পাশে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যান পদে চাকরির একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে ছোট ভাই বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন পল্লী বিদ্যুৎ অফিস যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং মেধা যোগ্যতায় চাকরিতে সুযোগ পায়। অপরদিকে চাচা আবুল হোসেন শরীফ ঢাকা বিভাগের অধিনস্থ টাঙ্গাইল জেলায় পল্ল¬ী বিদ্যুৎ অফিসে জুনিয়র ইনজিনিয়র হিসেবে কর্মরত থাকায় ছোট ভাইয়ের চাকরির বিষয় সে আমাদের কাছে ৬ লাখ টাকা দাবি করে বলেন আমার ছোট ভাইয়ের চাকরি সে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ৬ লাখ টাকা কন্টাক্টে চাকরি হয়েছে এখন টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয় আমাদের সাথে এক পর্যায়ে আমি ও আমার মা ধার উদ্ধার করে আবুল শরীফ কে ৩ লাখ টাকা দেই, বাকি ৩ লাখ টাকার জন্য আমাদের সাথে অনেক খারাপ আচরণ করলে সেই থেকে তার সাথে আমাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
২০১৪ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ভারী গাড়ি চালক পদে সরাসরি জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আমি ঢাকার মিরপুর ১০ এ ফায়ার সার্ভিস এর ট্রেনিং কমপ্লেক্স এ সরাসরি যথাযথ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহকারে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করি। শারীরিক যোগ্যতা যাচাইবাচাই, কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই, গ্রেজ টেস্ট, রোড টেস্ট, লিখিত পরিক্ষা ও মৌখিক পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১০০ মার্কের ভিতরে ৯৩ মার্ক পেয়ে বরিশাল বিভাগ থেকে প্রথম ও সমগ্র বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী ৬৪৪ জন প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হই। মৌখিক পরিক্ষা শেষে নিয়োগ পরিক্ষায় উপস্থিত থাকা নিয়োগ বোর্ডের কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে ব্যাক্তিগতভাবে আমার পারিবারিক খোঁজ খবর জানতে চেয়ে আমার পরিক্ষার ফলাফল সম্পর্কে আমাকে অবগত করে সান্ত¡না দিয়ে আরো বলেন সরকারি চাকরির জন্যে আবেদনের যে ৩০ বছর বয়স নির্ধারন করা আছে তাতে এটাই আমার শেষ সুযোগ চাকরির, কারন আমার ৩০ বছর পূর্ন হতে আর মাত্র ১ মাস ১৪ দিন বাকি আছে, এবিষয়ে নিয়োগ কমিটি বিবেচনা করেছেন। আমার চাকরি হলে মেধা যোগ্যতা অনুযায়ী হবে। পাশাপাশি সতর্ক করে বলেন চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো দালাল কিংবা কাহারো ভুল পরামর্শ অনুযায়ী যাতে কারো সাথে কোনো প্রকারের আর্থিক লেনদেন না করি।
এদিকে আমার চাচা আবুল শরীফ আমি ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ পরিক্ষা দিতে এসেছি জেনে সে দ্রুত বাড়িতে এসে আমার মায়ের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়। মা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আমার ফায়ার সার্ভিসে চাকরির জন্যে একজায়গায় কথা হয়েছে সেখান ১০ লাখ টাকা লাগবে তার লিখিত ডকুমেন্ট তৈরি করতে স্বাক্ষর নিয়েছেন। মা বলেন আমার সাথে আলোচনা না করে কোনো ধরনের কোনো কিছু না করার জন্যে। সে মাকে কোনো জবাব না দিয়ে ঢাকা চলে যায়। আমার চাকরিতে যোগদান এর জন্য ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে ডাকযোগে চিঠি আসলে সেই খবর শুনে চাচা আবুল শরীফ ১০ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করে বলেন আমি লোন করে, ধার করে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে রেখেছি তাই চাকরি হয়েছে, এখন আমার টাকা দাও। এবিষয়ে আমি টাকা দিতে অস্বীকার করি এবং আমি তাকে বলি আপনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস না করে আলোচনা না করে একাএকা এই ধরনের নোংরামি কথা বার্তা বন্ধ করেন। আমাদের কাছে টাকা নেই আর আমি এবিষয়ে কোনো টাকা দিবো না। এই বলে আমি ট্রেনিং এ যোগদান করলে আমার চাচা আমাদের অবর্তমানে বাড়িতে এসে আমার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করেন। ছোট ভাইয়ের চাকরির সময়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে মিথ্যা বলে, মা সেই কথা তুললে চাচা আবুল শরীফ বাকি ৩ লাখ টাকা ও আমার চাকরির ১০ লাখ মোট ১৩ লাখ টাকা দাবি করে আমাদের ভোগদখলীয় জমি দখল করার চেষ্টা করেন এবং এ বিষয়ে আমার বড় চাচা ইসমাইল শরীফ ও তার দুই ছেলে মনির শরীফ ও মামুন শরীফ চাচা আবুল শরীফকে সহযোগিতা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন পূর্বে আমার মায়ের চিকিৎসা কাজে ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে আমার ঘর ও জমি দখল করেন, আমরা ঢাকা থেকে ফিরে স্থানীয় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ, ইউপি সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণ আমার জমি ও ঘর আমাকে উদ্ধার করে দেয়। ওই ওইসময়ে ন্যায় বিচার চেয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে পাশাপাশী বরিশালের একটি বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করা হলে, চাচা আবুল হোসেন শরীফ বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন।
সর্বশেষ গত বুধবার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা, তার একটা ফোনে নাছিম শরীফের বসতবাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে মর্মে হুমকি প্রদান করেন। এমনতবস্তায় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক সহ বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, প্রশাসন, সাংবাদিক সহ সমাজের সকলের দৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করছেন।
‘‘দোষ-ত্রুটি ভুলে যাওয়ার পরেও যারা সংশোধন হচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ : হাসান মামুন’
প্রতিষ্ঠাতা: মোঃ রিয়াদ হোসাইন , গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি !! ‘বিগত সরকারের......বিস্তারিত