DailyBarishalerProhor.Com | logo

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আশুরা কী ও কেন?

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯, ১০:০৬

আশুরা কী ও কেন?

বিশেষ প্রতিনিধি, কামরুল হাসান নেছারী !! দুনিয়া সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত আল্লাহ পাক অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন ৷ এগুলি বিভিন্ন দিনে সংগঠিত হয়েছে ৷ আর সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দিনগুলি স্মরণীয় হয়ে আছে ৷ প্রত্যেক ঘটনার মধ্যেই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে ৷ তেমনি এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবস হচ্ছে “আশুরা দিবস” ৷ মুহাররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরার দিন বলা হয়ে থাকে ৷

এ দিবসে মহান আল্লাহ এ বিশ্ব জগৎ সৃষ্টি করেন। এ দিবসে হযরত আদম (আঃ) এর দোয়া কবুল করা হয়। এ দিবসে হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি মহা প্লাবন শেষে জমিনে লাগে। নবী আইয়ুব (আঃ) রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন, এ দিনে ইউনূছ (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, এই দিবসে হযরত মূছা (আঃ) তাঁর অনুসারীদের কে নিয়ে ১২টি অলৌকিক ভাবে তৈরী হওয়া রাস্তা দিয়ে নীল নদ পার হন এবং ফেরাউন তাঁকে তাড়া করতে গিয়ে নদীতে স্ব-দলবলে ডুবে মারা যায়। এ দিবসে হযরত ইসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। সর্বশেষ ইসলামের ইতিহাসে কারবালার ঘটনা এক গুরুত্ব পূর্ন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে এই দিনে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ) অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকার না করে এক অসম যুদ্ধের মাধ্যমে ৬১হিঃ ১০ই মহররম আত্মবিসর্জন দিয়ে শাহাদাৎ বরন করেন। যাহা এক বিরল দৃষ্টান্ত। সেদিন ফোরাত নদীর পারে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) তার শিশু পুত্রসহ ৭২ জন সাথীকে নির্দয়ভাবে শহীদ করেছিল ইয়াজিদের সিমারের দল। পাষন্ডরা সেদিন ইসলামের উপর কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করেছে। সত্য ও ন্যায়ের অতন্ত্র প্রহরী ইমাম হোসাইন (রা.) এর পরিবারবর্গ সেদিন অকাতরে রক্তের সাগর প্রবাহিত করে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিজয়ের লক্ষ্যে বীজবপন করে গেল। তাদের উৎস্বর্গীকৃত জীবন ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ১০ই মহরম সেদিন কারবালায় যে ইতিহাস রচিত হল তার পটভূমিকাও ব্যাপক, মহান রাববুল আলামিনের এই রহস্যময় সৃষ্টিকল্পের সৃষ্টির লগ্ন থেকেই ১০ই মহররম ছিল তদানিন্তন ইতিহাসের স্বাক্ষর।

সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই মুহাররাম মাসকে আল্লাহপাক ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ রুপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিম্নোক্ত ঘটনাবলীর মাধ্যমে।

অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবেন যিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইনকে (আ.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। গুটি কজন মানুষের বিপক্ষে ৪০০০ সৈন্য। পানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়ায় ইমামের (আ.) কচি সন্তানেরা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে হযরত আব্বাস (আ.) ফোরাতে যান পানি আনতে। নিজেও তিনি ভীষণ তৃষ্ণার্ত ছিলেন। আঁজলা ভরে পানি তুলে খেতে যাবেন এমন সময় তাঁর মনে পড়ে যায় ইমাম হোসেন (আ.) এর তৃষ্ণার্ত শিশু সন্তানের কথা। পানি ফেলে দিয়ে মশক ভর্তি করে তাঁবুর উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই শত্রু পক্ষের আঘাতে তাঁর এক হাত কেটে যায়। মশকটাকে তিনি অপর হাতে নিয়ে ইমামের (আ.) তাঁবুর দিকে ছুটলেন। এবার অপর হাতটিও কাটা পড়ে। মশকটাকে এবার তিনি মুখে নিয়ে তাঁবুর দিকে যেতে চাইলেন। শত্রুর তীর এবার সরাসরি তার দেহে আঘাত হানে। এভাবে শহীদ হয়ে যান তিনি। এরপর অসম এই যুদ্ধে আলী আকবর (আ.) শহীদ হয়ে যান।
কারবালায় আরো যাঁরা শহিদ হন তাদেঁর মধ্যে রাসূলের প্রিয় সাহাবা হাবিব ইবনে মাজাহের,মুসলিম ইবনে আওসাজা,নওমুসলিম ওহাবসহ আরো অনেকেই।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দুরাবস্থায় পতিত হয়ে হুসাইন (আ.) ওবায়দুল্লাহর নিকট তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটা গ্রহনের অনুরোধ জানান। তাহলো-হয় তাকে মদীনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক, কিম্বা তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক, বা ইয়াজিদের সাথে আলোচনার জন্যে দামেস্কে যেতে দেয়া হোক। কিন্তু ক্ষমতাদর্পী ওবায়দুল্লাহ এর কোনটাই মানলো না। এদিকে পানির অভাবে হুসাইন (আ.) এর শিবিরে হাহাকার পড়ে গেলো। ছোট শিশুরা মুর্ছা যেতে লাগলো। নিরুপায় হুসাইন শেষবারের মত অনুরোধ করলেও,পাষান্ডদের মন গলেনি। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধ শুরু হলো। হুসাইনের (আ.) ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম শত্রুর আঘাতে শাহাদাত বরন করলেন। তৃষ্ণার্ত হুসাইন (আ.) এর শিশুপুত্র আসগর (আ.) কে কোলে নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর শিশুপুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়ে শিশু পুত্রটি শাহাদাত বরন করলে একাকী অবসন্ন হুসাইন (আ.) তাবুর সামনে বসে পড়লেন। সীমার নামীয় ইয়াজিদের এক সৈন্য তরবারীর আঘাতে হুসাইনের (আ.) নামাজ রত অবস্থায় মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। এই ভয়ন্কর দৃশ্যে কঠিন হৃদয়ও বিগলিত হলো। হুসাইন (আ.) পরিবারের জীবিত সদস্যদের বন্দী করে দামেস্কে ইয়াজিদের নিকট পাঠানো হয়। এদিকে হুসাইনের (আ.) মৃত্যুর এমন ভয়াবহ দৃশ্য পুরো দেশের মানুষকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলল। ইয়াজিদ ভয় পেয়ে গেলো। ক্ষমতা নিরাপদ রাখতে এবং জনরোষের ভয়ে কৌশলী ভুমিকায় সে বন্দিদের মুক্ত করে মদীনায় পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেনি বণি উমাইয়ার অত্যাচার তারা একের পর এক ইমাম (আ.) কে শাহাতদের মুখে ঢেলে দেয়।

এবার আসুন আরো বিস্তারিতঃ

বর্তমানে দেখা যায় প্রায় সর্ব মহল থেকে আশুরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়।

ইসলামের আগমনের পূর্বে আশুরা ছিল। যেমন আমরা হাদীস দ্বারা জানতে পেরেছি। তখন মক্কার মুশরিকরা যেমন আশুরার সওম পালন করত তেমনি ইহুদীরা মুছা আ. এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত।

আল্লাহর রসূল (সা:) আশুরার সওম পালন করেছেন জীবনের প্রতিটি বছর। তার ইন্তেকালের পর তার সাহাবায়ে কেরাম রা. আশুরা পালন করেছেন। রসূলুল্লাহ (সা:) এর ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর হিজরী ৬১ সালে কারবালার ময়দানে জান্নাতী যুবকদের নেতা, রসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রিয় নাতী সাইয়েদুনা হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। ঘটনাক্রমে এ মর্মান্তিক ইতিহাস এ আশুরার দিনে সংঘঠিত হয়েছিল।

আল্লাহর রসূল (সা:) ও তার সাহাবায়ে কেরাম যে আশুরা পালন করেছেন ও যে আশুরা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রেখে গেছেন তাতে কারবালার ঘটনার কোন ভূমিকা ছিলনা। থাকার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর আল্লাহর রসূল (সা:) এর সাহবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. আনাস বিন মালেক রা. আবু সাঈদ খুদরী রা. জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. সাহল বিন সায়াদ রা. যায়েদ বিন আরকাম রা. সালামাতা ইবনুল আওকা রা. সহ বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে রসূলুল্লাহ (সা:) ও তার পরিবারবর্গকে অনেক বেশী ভালবাসতেন। তারা আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার কারণে কোন কিছুর প্রচলন করেননি। মাতম,তাযিয়া মিছিল, আলোচনা সভা কোন কিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আল্লাহর রসূল (সা:) যেভাবে আশুরা পালন করেছেন তারা সেভাবেই তা অনুসরণ করেছেন।

অতএব আমরা কারবালা কেন্দ্রিক যে আশুরা পালন করে থাকি, এ ধরণের আশুরা না রসুলুল্লাহ (সা:) পালন করেছেন, না তার সাহাবায়ে কেরাম। যদি এ পদ্ধতিতে আশুরা পালন আল্লাহর রসূলের মুহব্বাতের পরিচয় হয়ে থাকত, তাহলে এ সকল বিজ্ঞ সাহাবাগণ তা পালন থেকে বিরত থাকতেন না, তারা সাহসী ছিলেন। তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। কিন্তু তারা তা করেননি। তাই যে সত্য কথাটি আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, তা হলো আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার স্মরণে যা কিছু করা হয় তাতে আল্লাহর রসূল (সা:) ও তার সাহাবাদের রেখে যাওয়া আশুরাকে ভুলিয়ে দিয়ে এক বিকৃত নতুন আশুরা প্রচলনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

আশুরার দিনে সাইয়েদুনা হুসাইন বিন আলী রা. এর শাহাদাত স্মরণে যে তাযিয়া মিছিল করা হয়, যে মাতম করা হয়, আলোচনা সভার ব্যবস্থাসহ যা কিছু করা হয় এর সাথে ইসলামী শরীয়তের কোন সম্পর্ক নেই। একশ্রেণীর মানুষ শিয়াদের প্ররোচনায় পরে অনেক অতিরঞ্জিত কাজ করে, যা কাম্য নয় ৷


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয় প্রধান কার্যালয়

মারীয়া কমপ্লেক্স, কাশিপুর বাজার, বরিশাল ।

মোবাইলঃ ০১৭১৬৬০৫৯৭১, ০১৫১১০৩৬৮০৯,০১৯১১১৭০৮৮৪

মেইলঃ barishalerprohor.news.bd@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ
Web Design & Developed By
ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক

প্রতিষ্ঠাতা :
মোঃ নাছিম শরীফ


উপদেষ্টা: খালিদ মাহমুদ

মেইলঃ barishaler.prohor@yahoo.com
  • মোবাইলঃ ০১৭১১০৩৬৮০৯, ০১৯১৯০৩৬৮০৯
    • সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমুন নাহার
    • ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মোঃ রাসেল আকন
    • নির্বাহী সম্পাদক: কাজী সজল
    • বার্তা প্রধানঃ মোঃ আল আমিন হোসেন
    ডেইলি বরিশালের প্রহর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।