বিশেষ প্রতিবেদক !! ভোলায় একদিকে টানাবর্ষণ জলোচ্ছ্বাস ও আরেক দিকে মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে জনজীবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের। ৫ আগষ্টের জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার একদিন স্থায়ী থাকলেও ১৯ আগষ্ট বুধবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার একেবারেই থামছেনা। এতে জেলার ৭ উপজেলার শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণের পানি জলোচ্ছ্বাস ও অতি জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে জেলার কয়েকশো মাছের ঘের গরুর খামার আবাদি ও ফসিল জমিসহ নদী ও খালের কূলে গড়ে উঠা অর্ধশত ইট ভাটা। অন্যদিকে তীব্র স্রেতে অতিবাহিত হওয়া পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার ফলে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামীণ বিভিন্ন সড়কসহ একাধিক ব্রিজ ও কালভার্ট।
পানিতে প্লাবিত কিছু কিছু গ্রামে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও অনেক গ্রামে এখনো পৌঁছায়নি সাহায্য বা শুকনো খাবার। ফলে সেখানকার কয়েক হাজার মানুষ অনাহারে রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে ভোলায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার বইছে মাঝেমধ্যে। টানা বর্ষণ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩২০ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে লোকালয়েও ঢুকেছে।
নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা ব্যক্তিরা বলছেন, ভোলার চারদিকে পাউবোর যে বেড়িবাঁধ রয়েছে, তার উচ্চতা জোয়ারের উচ্চতার চেয়ে কম। তাই মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে সহজেই বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।
সেজন্য ভোলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে পুরো বাঁধের সংস্কারের দাবি করে আসলেও। জেলা পাউবো তাতে কান দিচ্ছে না। তারা শুধু জরুরি ভাবে সাময়িক মেরামত করছে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগান্তি কমছেনা এ অঞ্চলের বসবাস করা মানুষের।
জেলা পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার প্রায় ২২টি স্থানে সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধের জরুরিভাবে সংস্কার করা হয়। এসব এলাকা ও এর আশপাশের বাঁধের আবারও ক্ষতি হচ্ছে। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে সদর উপজেলার রাজাপুর জোড়খাল, পূর্ব ইলিশার দালালবাজার মাছঘাট, সোনাডুগি, ধনিয়া, কোড়ারহাট, নাছিরমাঝি ও শিবপুর; দৌলতখানের চৌকিঘাটা, চরপাতা, মেদুয়া ও ভবানীপুর; বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা, মির্জাকালু, হাকিমউদ্দিন বাজার ও এছহাকমোড়সহ ১১টি স্থানে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মনপুরা ও চরফ্যাশনের সাতটি স্থানে সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে উত্তরের বন্যার পানি নামতে না নামতেই জোয়ার উঠছে। সঙ্গে আছে লঘুচাপ। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় পানির বিপদসীমা ১১৪ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ভোলার সবটুকু বাঁধের উচ্চতা আট মিটার বা তারও বেশি করা উচিত। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটে সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ৫ আগস্ট উচ্চ জোয়ারে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার জোয়ারে আরও ক্ষতি হয়েছে। লাগাতার উচ্চ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় তিনি সমস্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখেছেন। বাঁধ উঁচু ও টেকসই করার পরামর্শ দিয়েছেন। ভোলায় সব উন্নয়নের চেয়ে এখন বাঁধের উন্নয়ন জরুরীভাবে করা উচিত। এসময় তিনি আরও জানান, যেসকল এলাকায় এখনো ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছায়নি। সেসকল এলাকায় শীঘ্রই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
‘এমপি আনার হত্যা: ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের আরও নেতা নজরদারিতে’
প্রতিষ্ঠাতা: প্রহর ডেস্ক ।। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়......বিস্তারিত