প্রহর নিউজ ডেস্ক !! সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে সেইভ সাইডে থাকা ছাত্রদল নেতা রাকিবুল হাসান রাকিব ওরফে খন্দকার রাকিবসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী জোবায়ের আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ছাত্রদল নেতা রাকিবসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অনলাইনে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানী, মোবাইল ফোনে কল করে হুমকি ও হয়রানি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা নম্বর ২৩। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি নুরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২১ এপ্রিল বরিশাল ক্রাইম নিউজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে খন্দকার রাকিব ফেসবুকে সরফরাজ আহম্মেদ নামের আইডিতে প্রচার হওয়া স্ট্যাটাস সর্ম্পকে জানতে চান। উত্তরে জোবায়ের আব্দুল্লাহ স্ট্যাটাসগুলো অপপ্রচার এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান।
কিন্তু ছাত্রদল নেতা খন্দকার রাকিব তথ্যের যাছাই-বাছাই না করে তার মালিকানাধীন বরিশাল ক্রাইম নিউজ পোর্টালে সহযোগীদের নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে মনগড়া, মিথ্যা তথ্যের সংবাদটি প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে জোবায়ের আব্দুল্লাহর নিকটস্থ স্বজন, পরিচিতদের কাছে ফেসবুকে লিংক পৌঁছে দেন। পাশাপাশি ছাত্রদল নেতা খন্দকার রাকিবসহ বাকি ৬ আসামী জোবায়ের আব্দুল্লাহর ফোনে কল করে ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি প্রদান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ক্রাইম নিউজ পোর্টালের নাম ব্যবহার করে নগরী দাপিয়ে বেড়ানো খন্দকার রাকিব মূলত সরোয়ার পন্থি ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খান কালুর ডান হাত ছিলেন। সরকারি ব্রজমোহন কলেজে এই রাকিবের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলে থাকাকালীন অবস্থায় ওই এলাকার ত্রাস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রুপ চালাতে অর্থের প্রয়োজন হলে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েকবার থানা পুলিশের হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক হন তিনি। তার পিতা চরমোনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা রিকশার মেকানিক রফিকুল ইসলাম খন্দকার।
২০১২ সালের ২৩ মার্চ সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রদল নেতা রাফসান আহমেদ জিতুকে খুন করেন সরোয়ারপন্থি ফিরোজ খান কালু বাহিনী। এ ঘটনার কিছুদিন পরে কালু নিখোঁজ হয়ে গেলে বেকায়দায় পড়েন বিএম কলেজে কালুর ডানহাত হিসবে পরিচিত রাকিবুল ইসলাম ওরফে খন্দকার রাকিব। তিনি নাম লেখান সাংবাদিকতায়। স্থানীয় একটি দৈনিকে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
পাশাপাশি ওই পত্রিকায় থাকাকালীন অবস্থায় ২০১৩ সালের বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলবলসহ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের পক্ষে দলীয় কাজ চালিয়ে যান।
পত্রিকায় সরোয়ারের গুনগান আর ভোটের জড়িপে মনগড়া তথ্য দিয়ে আহসান হাবিব কামাল এগিয়ে রয়েছে মর্মে প্রচারণা ছড়াতে থাকেন। সেইসাথে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর উন্নয়নের তীব্র বিরোধীতা করে নগরীতে মাইক হাতে প্রচার-প্রচারনায় নামেন।
নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের পরাজয় হলে খন্দকার রাকিবের নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার ও আহসান হাবিব কামালের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তবে বড় ধরনের বিপাকে পড়েন ২০১৬ সালে। উদিয়মান তরুন নেতা, জনপ্রিয় রাজনৈতিক কর্মী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায়। তখন থেকে ছাত্রদলের অবস্থান গোপন করতে শুরু করেন এই রাকিব। অত্যান্ত কৌশলে সখ্যতা গড়ে তোলেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সাথে। আর ২০১৮ সালে বিপুল জনসমর্থন ও জনতার মেন্ডেট নিয়ে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীতে টিকে থাকার জন্য নিজের অতীত লুকিয়ে ফেলেন ছাত্রদল নেতা রাকিব।
নিজের রাজনৈতিক অবস্থানে ধোয়াশা তৈরী করে সাংবাদিক হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে নগরীর বিভিন্ন মাদক স্পট, দেহ ব্যবসার হোটেল, ড্রেজার ব্যবসায়ী, জাটকা শিকারী জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুলিশকে জিম্মি করে অর্ধলাখ টাকা চাঁদা আদায়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
তার নামে হলুদ অটোর বিট, মাহিন্দ্রার বিটও উত্তোলিত হয় বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। তাছাড়া রাকিবরে বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে কোতয়ালী থানায়। অভিযোগ রয়েছে, বিটের টাকায় থানা ম্যানেজ করে চলায় নগরীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে আটক করছে না। সম্প্রতি দেহ ব্যবসার হোটেল থেকে টাকা উত্তোলনের তথ্য ফাঁস হলে আঞ্চলিক একটি দৈনিক থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।
ওদিকে ২৪ এপ্রিল কোতয়ালী মডেল থানায় জোবায়ের আব্দুল্লাহর মামলায় অপর আসামীরা হলেন, হলুদ অটো সিন্ডিকেটের হোতা ও মাদক ব্যবসায়ী এসএন পলাশ, দেহব্যবসায়ীদের হোটেল শিকদারের মালিক হাফিজুর রহমান, সহযোগী শাহিন মৃধা, মেহেদী হাসান খান, খন্দকার রাজিব, সরফরাজ আহম্মেদসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জন।
‘এমপি আনার হত্যা: ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের আরও নেতা নজরদারিতে’
প্রতিষ্ঠাতা: প্রহর ডেস্ক ।। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়......বিস্তারিত