মোঃ নাছিম শরীফ
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও সন্মানজনক পেশা হলো সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা সমাজের দর্পন, জাতীর বিবেক। বাক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায়, সাংবিধানিক নিয়ম-নীতি সমন্বিত মৌলিক বিষয়গুলি সঠিকভাবে জনসাধারণের এবং সরকারের কাছে উপস্থাপন করাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার একদা পরিচালন সম্পাদক জেমস রাসেন উইগিনস বলেছেন, ‘সভ্যতা বলতে আমরা যা বুঝি তা বাঁচত না, যদি সংবাদ প্রচারের ব্যবস্থা না থাকতো। সংবাদ ছাড়া সমাজের বাসিন্দারা সেই সমতাবোধ থেকে বঞ্চিত হতো, যা না থাকলে আনুষ্ঠানিক বা রীতিবহির্ভূত কোনো আইন তৈরি করা সম্ভব নয়।” আমাদের সমাজে একটি শব্দ বা কথার প্রচলন আছে, সেটি হলো ‘ধন্যবাদ’। শব্দটির সঙ্গে আমরা ছোট-বড় সকলেই পরিচিত। একে অপরের দ্বারা যদি কোনো কল্যাণকর কাজে সন্তুষ্ট হয় তাহলে শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শব্দটি শুনে আমরা খুশি হই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ধন্যবাদ পেয়ে খুশি হওয়া যায়, সম্মান মেলে, কিন্তু পেট বাঁচে কি? উপজেলা পর্যায়ের অনেক মফস্বল সাংবাদিক শুধু মুখে মাস্ক আর মাথায় পলিথিন দিয়ে সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের নিজের হাতে যা আছে, তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁরা মন ও আত্মার মুক্তির জন্য সত্যের প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠা প্রদর্শন, জনসাধারণের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে সরকারকে এবং দেশের আইন-কানুন সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করতে কাজ করেন। দুর্বার গতিতে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তাঁরা দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা না হয়ে ছুটে চলেছেন। সেসব সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই টিভি চ্যানেলে কর্মরত,অনেকেই জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, মফস্বল পত্রিকা ও অনলাইনে কর্মরত। এখন আমরা সবাই করোনাভাইরাসের বিষয়টি জানি। ভাইরাস প্রতিরোধ কিংবা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সম্মুখসারিতে যোদ্ধা হিসেবে আছেন চিকিৎসকগণ। তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকরাও সম্মুখযুদ্ধে কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর ঝুঁকি রয়েছে, পাশাপাশি এটিও বিশ্বাস করতে হবে, সাংবাদিকদের ঝুঁঁকিও কম নয়। কিন্তু মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য কেউ এ রকম দাবি করেছেন বা তাদের কথা কেউ ভাবছেন এমন চোখে পড়েনি। অথচ করোনার মতো মহামারিতে মফস্বল সাংবাদিকরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের ভাগ্যে শুধুই মুখের ফুলঝুড়ি আর ফাঁকা বুলি। সাংবাদিকরা সবক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার। একজন সাংবাদিক শুধু পেশাদারিত্বের কাজই করছে না, সাংবাদিকতার পাশাপাশি মানবিক কাজগুলো করছেন। যার অসংখ্য নজির রয়েছে আমাদের দেশে। মফস্বল সাংবাদিকদের অবদানও কম নয়। আমি সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করছি। আমরা যারা মফস্বল সাংবাদিকতা করছি, আমরা জানি, মফস্বলে সাংবাদিকতা কতটা কষ্টের। তবে এখন অনেক হাউস মফস্বলের সাংবাদিকদের খোঁজখবর নেন, তাদের সম্মানও দেন। তারা মফস্বলের সংবাদকর্মীদের সুখ-দুঃখের ভাগিদারও হন। বড় বড় কর্পোরেট হাউসের কল্যাণে কিছুটা হলেও সম্মান পান মফস্বল সাংবাদিকরা। একটা সময় তাও ছিল না। তারপরেও অনেক কথা বলতে হচ্ছে। অনেকেই নিজেদের কষ্টের কথা বলতে পারেন না, তাই! তাতে তাদের কোনো দুঃখ নেই। তাই এখনই সময় সংবাদকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ সুরক্ষা এবং সম্মান দেন। করোনায় করুণা করে নয়, ন্যায্য পাওনা হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাই আমার আহ্বান বাংলাদেশে যত গুলো সংগঠন আছে তাদের উচিত মফস্বলা সাংবাদিকের পাশে দাড়ানো। শুধু ধন্যবাদে সম্মান মেলে কিন্তু পেট বাঁচে না। ধন্যবাদের পাশাপাশি সুরক্ষার দিকটাও বিবেচনা করতে হবে। তাতে দেশেরই লাভ।
লেখক ঃ প্রতিষ্ঠিাতা, দৈনিক বরিশালের প্রহর
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদ (এসএসপি) কেন্দ্রীয় কমিটি
আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় কমিটি
‘‘দোষ-ত্রুটি ভুলে যাওয়ার পরেও যারা সংশোধন হচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ : হাসান মামুন’
প্রতিষ্ঠাতা: মোঃ রিয়াদ হোসাইন , গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি !! ‘বিগত সরকারের......বিস্তারিত