স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘনিয়ে এসেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষনা না হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়ে দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক হেডকোয়ার্টার খ্যাত বরিশাল সদর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন প্রার্থী। যারা সবাই আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেট পেয়ে সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে রয়েছেন নতুন মুখ। যদিও দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে নৌকার বিজয়ে তার পক্ষেই কাজ করার বিষয়ে আশা ব্যক্ত করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে ২১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্যতম বরিশাল সদর আসনটি। এটি জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৫নং আসন হিসেবে পরিচিত। কোন কোন ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের হেড কোয়ার্টার হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে এই আসনটি। বিগত নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী সদর আসনটি বিএনপি’র ঘাটি বা ভোট ব্যাংক। বিগত কয়েক যুগ ধরেই সদর আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছে বিএনপি’র প্রার্থীদের কাছে। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম বারের মত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন বিসিসি’র সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন। এমনকি তার মৃত্যুর পরে উপ-নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিরন পত্নী জেবুন্নেছা আফরোজ বিএনএফ এর প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবেন এই আসনের এমপি তাই এখন ভাবনার বিষয়। আওয়ামী লীগের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে নাকি হারানো আসন বিএনপি ফিরে পাবে সে হিসাব নিকাশ কষছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বরিশাল সদর আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষন। তবে সদর আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পিছিয়ে নেই। এরই মধ্যে দলীয় এবং নির্বাচনমুখী সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে এসেছেন অর্ধ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল মহানগরী পর্যায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অমুল পরিবর্তন এনে দেন শওকত হোসেন হিরন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে সভাপতিও ছিলেন। সিটি মেয়র থাকাবস্থায় উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেন। এজন্য সিটি নির্বাচনে পরাজিত হলেও পরবর্তীতে সদর আসনে পুরস্কার স্বরুপ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তবে এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে বরিশাল সদর আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান হিরন পত্নী জেবুন্নেছা আফরোজ। এক কথায় গৃহবধূ থেকে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তবে দায়িত্ব পালনের গত প্রায় চার বছরে এমপি জেবুন্নেছা আফরোজকে নিয়ে নানান অভিযোগ তোলেন সদর আসনের ভোটাররা। জনবিচ্ছিন্ন জেবুন্নেছা আফরোজ এর বেশিরভাগ সময় কেটেছে রাজধানীতে। যে কারনে চাইলেই তাকে খুঁজে পাননি ভোটাররা। তাছাড়া প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি বলে অনুসারীরা দাবী করছেন। তবে এত অভিযোগের পরেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় উঠে এসেছে জেবুন্নেছা আফরোজের নামটি। এমনকি দ্বিতীয় বারের মত দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দলের হাই কমান্ডে লবিংও চালাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে জেবুন্নেছা আফরোজ এর বক্তব্য জানা যায়নি। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সংসদ অধিবেশনে থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকে কথা বলার সুযোগ দেননি। তবে, সিটি নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ’র পক্ষে নির্বাচনী মাঠে থাকায় কিছুটা ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।
মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ-বীর বিক্রম বলেন, বিগত যে তিনটি নির্বাচনে আমি অংশ নিয়েছি তার কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু ভাবে হয়নি। বিএনপি’র আমলে হওয়া ওই নির্বাচনে আমাকে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে জোর করে পরাজিত করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি নিশ্চিত বিজয়ী হতাম।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে থেকে চাহিদা অনুযায়ী মানুষের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বরাদ্দের অভাব রয়েছে। কাজ করাতে হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে। মানুষের কথা শুনলেও তা বলার সুযোগ কম। কিন্তু সংসদ দাড়িয়ে মানুষের দাবীগুলো তুলে ধরা যায়। পর্যন্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করে উন্নয়ন করা সম্ভব। সেই চিন্তা ধারা থেকে এবং জনগনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি বরিশাল সদর আসনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। যিনি দীর্ঘ বছর ধরেই বরিশাল কেন্দ্রীক রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিগত শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। বিগত রাজনৈতিক জীবনে দলীয় পদ ছাড়া জনপ্রতিনিধির স্বাদ পাননি তিনি। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন।
গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, একটি ভালো পর্যায়ে যেতে কে না চায়? আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। দল এবং নেত্রী যদি মনে করেন আমি যোগ্য তবে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। আমি জনগন ও বরিশালের উন্নয়ন করতে চাই। এটা একজন সংসদ সদস্য হয়ে করা সম্ভব। সংসদে মানুষের দাবী তুলে ধরা সম্ভব। আমি মনে করি দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের আমাদের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি’র নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আরো সুদৃঢ় ভাবে এগিয়ে নিতে পারব। তবে দল থেকে যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয় আমি নৌকার বিজয়ে তার পক্ষেই কাজ করব।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসআর সমাজ কল্যান সংস্থার উদ্যোক্তা সালাউদ্দিন রিপন বলেন, এসআর সমাজ কল্যান সংস্থা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই সংগঠনটির মাধ্যমে গত এক বছরে ১৭ হাজার বৃদ্ধাকে হাস-মুরগী দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেছি। ২২ হাজারের বেশি চক্ষু রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা করিয়েছি। চোখের ছানি অপারেশন যোগ্য তালিকাভুক্ত ৩ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে ১৪শ জনের চোখের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। বিনা খরচে এ ধরনের আরো অনেক মানুষের চিকিৎসা সহায়তা সহ নানান ভাবে সহযোগিতা করে আসছে এসআর সমাজ কল্যান সংস্থা। এসব মানুষের পাশে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে এবং কাজ করতে গিয়েই মুলত ভোটের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা যাগে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজধানীর প্রথম শ্রেণির ব্যবসায়ী এবং কড়াপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফিন মোল্লা বলেন, আমি বরিশালের সন্তান হলেও স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করিনি। তবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একজন কর্মী হিসেবে আমি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছি। আমি এই অঞ্চলের সন্তান। তাই এখানকার মাটি ও মানুষের জন্য আমার টান রয়েছে। সেই টানেই আমি তৃনমুলের মানুষের কাছে ছুটে এসেছি।
মনোনয়ন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে দলীয় মনোনয়ন কেন দেয়া হবে না ? আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকেই করে। কিন্তু তারা কে কি করেছে? আমি তৃনমুল্যের জন্য অনেক কিছু করেছি। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কাজ করেছি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কিছু করেছি। যার বড় প্রমান ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী। ওইদিন বঙ্গবন্ধু স্মরণে যে আয়োজন আমি করেছি তা আওয়ামী লীগের অন্য কেউ করে দেখাতে পারেনি। তৃনমুলের মানুষ আমাকে ভালোবাসে এবং ভালো জানে। সেজন্যই তাদের সহযোগিতায় গোটা বরিশালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মরণে আমি সর্ববৃহৎ ওই অনুষ্ঠান করতে পেরেছি।
আরিফিন মোল্লা বলেন, রাজনীতির কিং মেকার জননেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি আমার রাজনৈতিক অভিভাবক। এমনকি তার আশির্বাদেই আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছি। আশা করি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার যোগ্যতার বিবেচনা করবেন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে বরিশালকে আধুনিক ও উন্নয়নের রোল মডেল করে গড়ে তুলবো। আমার প্রধান লক্ষ্যই হবে আইটি নগরীতে পরিনত করা। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ১০ ইউনিয়নে পৃথক মাদ্রাসা, স্কুল সহ শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করন সহ নানান পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন আরিফিন মোল্লা।
‘ঘুষ দুর্নীতির প্রমান পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না —বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান’
প্রতিষ্ঠাতা: আল আমিন,বাবুগঞ্জ(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-......বিস্তারিত