বরিশালের প্রহর অনলাইন ডেস্ক : তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ বেলায় ভোটের অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত মেয়রপ্রার্থীরা। ভোটের নানা মেরুকরণে জয়-পরাজয়ে ব্যবধান গড়ে দেয় এমন ভোট ব্যাংকগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তরুণ ও নারী ভোটের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক, আঞ্চলিক, সংখ্যালঘু, বস্তি ও কর্মসূত্রে ভোটারের গুরুত্ব বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে প্রতীক একটি বড় বিষয়। প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থী, তাদের কর্মকা-, স্থানীয় উন্নয়ন, দলীয় অবস্থান, অন্তঃকোন্দল এবং একই সঙ্গে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুগুলোও প্রাধান্য পাবে। তবে তারা আরো বলছেন, এগুলোর সবই নির্ভর করছে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে তার ওপর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় জানা গেছে, সরকারবিরোধী শিবিরে সোনা ও কয়লা দুর্নীতির বিষয়টি এখন ভোটারদের মুখে মুখে। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এ দুটি ইস্যু আওয়ামী লীগের ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নির্বাচনের শেষ বেলায় এ বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়রপ্রার্থীসহ অন্যরা। এ অবস্থায় আজ শনিবার মধ্যরাতে নির্বাচনী গণসংযোগও শেষ হচ্ছে। প্রচার শেষ হলে নির্বাচনী নানা মেরুকরণ ঘটে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির আতঙ্ক ‘গ্রেপ্তার ও জালভোটে’। আওয়ামী লীগের ভয় ‘অপপ্রচারে।’
খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিএনপি একটি কথাই বারবার বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা? ভোটাররা আদৌ কেন্দ্রে যেতে পারবেন তো। প্রার্থীর এজেন্টরা কি কেন্দ্রে থাকতে পারবেন। এসবের ওপরই নির্ভর করছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ।
সুশাসনের জন্য নাগরিকসুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। খুলনা-গাজীপুর মডেলে ভোট হবে বলে মনে হচ্ছে।
সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রথমে সরকারকে কমিটমেন্ট করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। কিছু প্রার্থী ঝামেলা করতে চাইবে। তবে সরকার ও ইসি ঠিক থাকলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব।
৩০ জুলাই বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।
বরিশাল : শেষ মুহূর্তে নগরীর ৩৫ বস্তিতে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটার আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করছেন বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ। ধারণা করা হচ্ছে বস্তিবাসীর ভোট যে প্রার্থী কব্জায় নিতে পারবেন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হবেন। এবারের নির্বাচনে ৩০ হাজার ৯০৯ জন নতুন ভোটার। সেদিকটিও হিসাব করছেন প্রার্থীরা।
এ ছাড়া শহরে ৩০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ভোটার রয়েছে ৫০ হাজার। হেফাজত ও চরমোনাইর অনুসারীদেরও পৃথক নির্দিষ্ট কিছু ভোটার রয়েছে। এসব ভোটব্যাংকের দিকে টার্গেট করেই প্রচার চালাচ্ছেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আঞ্চলিক ভোটাররা মূলত হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দীগঞ্জ, গৌরনদী-বাবুগঞ্জ এবং নলছিটি-স্বরূপকাঠি-বাউফল উপজেলার বাসিন্দা। সাদিক আবদুল্লাহর পৈতৃক বাড়ি আগৈলঝাড়া হওয়ায় গৌরনদী ও বাবুগঞ্জের ভোটাররা তার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। অন্যদিকে সরোয়ারের পৈতৃক বাড়ি হিজলা উপজেলায় হওয়ায় হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দীগঞ্জের ভোটাররা তার দিকেই বেশি।
জানা যায়, নির্বাচনে নতুন ও বস্তিবাসী ভোটারদের ভোট কব্জায় নিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার তার ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচিত হলে তিনি তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ইপিজেড স্থাপন এবং বস্তিবাসীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করেছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ গণসংযোগের সময় তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস এবং বস্তিবাসীর উন্নয়নে কাজ করার কথা বলছেন।
বরিশাল মহানগর সুজন সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বরিশালের প্রহরকে বলেন, নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে নতুন ও নিম্নআয়ের ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, যারা বরিশাল শহরকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন তাদের নির্বাচিত করা উচিত।
সিলেট : সিলেটে শেষ সময়ের প্রচারে সবাই সমান। শুক্রবার ছুটির দিনে প্রার্থীদের সরব প্রচারে সকালেই জেগে ওঠে সিলেট।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সব ভোটারকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে সামনে রেখে সিলেটে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নগরবাসী শুধু উন্নয়নই নয়, শান্তি ও চান। এই বিষয়ই আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখবে। কেননা বিএনপি যে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করে তা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ বলেন, সব ভোটারকে সমান গুরুত্ব দিলেও সিলেটের তরুণ ও নারী ভোটারদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। কেননা তারা রাজনীতির চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয় সঠিক উন্নয়ন ও সৌহার্দের বিষয়টিকে।
বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীও উন্নয়নকে নিয়ে আসতে চান সামনে। সব ভোটার সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কাজে বিশ্বাস করি। মাত্র আড়াই বছরে আমি যা করেছি তার সাক্ষী নগরবাসী।
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে ড্রিম টিম নামে একটি বিষয় এনেছি। তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা আমাদের ড্রিম টিম গড়ে তুলব। এর বাইরে হেফাজত ও কয়েকটি ইসলামি দলের ভোটব্যাংক টানতে চেষ্টা করছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
সিলেটে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি ইরফানুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটের বাইরে থেকে আসা ভোটারদের সংগঠনের সঙ্গে দুই প্রধান প্রার্থীরই আলাদা যোগাযোগ আছে।
নগরীতে ছোট-বড় মিলে ৩০টির বেশি আঞ্চলিক সমিতি সক্রিয়। এর মধ্যে চারটির সদস্য সংখ্যা সোয়া লাখের বেশি। এর মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় ৬৫ হাজার, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৩৫ হাজার, বৃহত্তর কুমিল্লার ১৫ হাজার, বৃহত্তর খুলনার ১০ হাজার মানুষ এসব সমিতিতে যুক্ত বলে সংগঠনের নেতাদের ভাষ্য।
রাজশাহী : রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ও ধানের শীষ প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের টার্গেট নগরীর নতুন ও নারী ভোটাররা।
এবার নতুন ভোটার ৩১ হাজার ২২১ জন। এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জনই নারী ভোটার। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি অঞ্চলের এলাকার লোক বসবাস করেন। সেই ভোট ও হিন্দু ভোট নজর আছে সবার।
তরুণদের ভোট টানতে মেয়র নির্বাচিত হলে এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খায়রুজ্জামান লিটন। এ ছাড়া মহানগরের বড়কুঠি ওয়াইফাই জোন আবারও চালু। নতুন নতুন এলাকা উন্মুক্ত ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা। উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের ব্যবস্থা। তরুণদের স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরির চমক দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি যেন এই তরুণদের ভোটারদের ঘিরেই।
আর নারী ভোটারদের আকর্ষণ করতে রয়েছে বন্ধ থাকা গ্যাস সংযোগ আবারও চালু, গার্মেন্টসশিল্প তৈরি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের প্রসার ঘটানোসহ নানান প্রতিশ্রুতি।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, রাজশাহীতে প্রায় দুই লাখ বেকার যুবক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ কারণে তারা মাদকসহ বিভিন্ন নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এবার নির্বাচিত হলে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করব। আর নারীদের জন্য কুটিরশিল্প ও হস্তশিল্প কারখানা তৈরির মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেব। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল গড়ে তুলব।
সূত্র : বরিশালের প্রহর অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।
‘ঘুষ দুর্নীতির প্রমান পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না —বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান’
প্রতিষ্ঠাতা: আল আমিন,বাবুগঞ্জ(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-......বিস্তারিত