DailyBarishalerProhor.Com | logo

২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দর আচরণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৬, ২০১৯, ১২:৩৪

সুন্দর আচরণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়

মো: ওসমান গনি !! ঘরে বাইরে, অফিস আদালতে চারপাশে চলেফিরে বেড়াতে যে ব্যাপারটা বারবারই চোখে পড়ে, মনের মধ্যে দাগ কাটে তা হলো মানুষের ব্যবহার। এই এক বিষয়, কী যে প্রয়োজন মানুষের! কাজ করি, খাইদাই, পড়াশোনা করি, বিদ্যার্জন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ হই যা কিছুই হই না কেন ভাল ব্যবহারের বিকল্প নেই। আচার-আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তায় মানুষ যদি ঠিক শোভন না হয়, তা হলে যত বড় বিদ্বান হোন, চাকরি-বাকরি করুন ঠিক মানুষ বলা যাবে না।

কথায় বলে না ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়।’ এ এক খাঁটি কথাই। ব্যবহারে যেমন বংশ, আবার মানুষেরও তো পরিচয়। ব্যবহারে বংশের পরিচয় এ কারণেই বলা হয় মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, আচার-আচরণের প্রাথমিক শিক্ষা তো পরিবারেই হয়। পরিবারে বাবা-মা, দাদু-দিদিমা, মামা-কাকা, খালা-পিসি এসবের মধ্যেই তো শিশুর শৈশব-কৈশোর। স্কুল-কলেজের শিক্ষা তার কিছু পরিশীলন ঘটালেও মৌলিক শিক্ষা বলতে যা মানুষের, পরিবার তার প্রধান ক্ষেত্র। পিতা-মাতা ভাই-বোন সবের মধ্যেই শিশুর জন্ম, বিকাশ, আচার-আচরণ, চরিত্র গঠন। তাই তো সাধারণ কথাটা খুব সাধারণও নয়।

মনে রাখতে হবে, আমরা যেভাবে কথা বলি, যেভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করি, মানুষ আমাদের যেভাবে দেখে-চেনে, জানে তাতে সে শুধু আমাকেই জানে না, আমার পিতা-মাতা, দাদা-ঠাকুরদা মোট কথা বংশের বিষয়েই একটা ধারণা পায়। তাই তো আমাদের আচার-ব্যবহার এমন হওয়া দরকার যেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা কোনভাবেই অপমানিত না হন। বাপ-ঠাকুরদা তুলে যখন কেউ গালি দেয় কেমন লাগে? খুব খারাপ না? সে তো শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবার ক্ষেত্রেই হয়। এটুকুই যদি মনে রাখি আমরা, তা হলেই হয়। আমাদের ব্যবহারে যেন আমাদের পরিবার, বংশ তথা পূর্বপুরুষগণ প্রশংসিত হতে পারেন সে চেষ্টাই করা উচিত।

এ তো গেল সাধারণভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য একটা কথা। যে বিষয়টা নিয়ে এ প্রসঙ্গের অবতারণা সেটাই এখন বলি। অফিস-আদালতে, কাজের ক্ষেত্রে প্রতিক্ষণেই যে বিষয়টা আহত করে সে ওই ব্যবহার সম্পর্কিতই। শিক্ষিত লোকজন; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকেই তো কেউ চাকরিতে ঢোকেন। যদিও বলে, প্রকৃত শিক্ষা তো শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের শিক্ষাই নয়। শিক্ষা মানে হচ্ছে আলোক মনের আলোকপ্রাপ্তি। সমস্ত ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের সমন্বয়ে অন্তরকে বিকশিত করাই শিক্ষা। শিক্ষার মৌলিক ব্যাখ্যা এই রকমই। এর পরেই আসে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে, সাধারণভাবে জীবনের জৈব তথা মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে কোন কাজের উপযোগী হওয়ার সার্টিফিকেট অর্জনের শিক্ষা। দেখা যাচ্ছে, মানুষের আসল মৌলিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে কেবল সার্টিফিকেট অর্জনের শিক্ষাই আজকাল বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনটাকে ভাল একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে আত্মনির্ভরশীল হতে কারিগরি শিক্ষাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার শিক্ষার তো বিকল্প নেই সে ঠিক। তবু সব কিছুর আগে তো প্রয়োজন মানুষের মানুষ হওয়ার শিক্ষা। মৌলিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা। আচার-আচরণের শিক্ষা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখি, পরস্পরের প্রতি পরস্পরের কথাবার্তা আচার-আচরণে ঠিক সভ্যতার প্রকাশ পায় না। এমনভাবে একটা কথা বলে বসেন এককজন, এমনভাবে কথা ছুড়ে দেন অন্যের দিকে যে আহত হতেই হয়। শব্দ উচ্চারণে, বাক্য ব্যবহারে এমনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় যে অন্যজনে আহত না হয়েই যান না। এক্ষেত্রে সত্যি বলতে পুরুষেরাই এগিয়ে। অফিস-আদালতে পুরুষ সহকর্মী ভাল-শোভন ব্যবহারের সে যেন সত্যিই এক দুর্লভ বিষয়। বেশিটা ক্ষেত্রেই তারা বিপরীত লিঙ্গের সহকর্মীদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নন। তারা উদ্ধত কিংবা উন্নাসিকও। নিজেদের অহেতুক বড় করে দেখানোর একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে। মনে হয় যেন সহকর্মীকে হেয়প্রতিপন্নের এক মানসিকতা নিয়েই কথাবার্তা বলেন। সন্দেহ নেই এ তাদের আচার-আচরণের মৌলিক দীনতা, মানসিক হীনতারও পরিচয়। বিসিসি ট্রেইনিং বিষয়টি তাই জরুরী। চাকরি ক্ষেত্রে যোগদানের ট্রেইনিং সময় থেকে শুরু করে মাঝে মধ্যের অন্তবর্তী সময়ের যত ট্রেইনিং প্রতিটি ক্ষেত্রে এ বিষয়ে একটি-দুটি সেশান থাকাটা প্রয়োজন।

কথা শব্দ, বাক্য এমনভাবে বলতে হবে, উচ্চারণ করতে হবে যাতে করে একজন মানুষ শুনে খুশি হন, সন্তুষ্ট হন, আশ্বস্ত হন, মনের মধ্যে পজিটিভ একটা ইমপ্রেশন হয়। শব্দ নির্বাচনে, বাক্য ব্যবহারে, বাক্যের ডেলিভারিতে এমন হতে হবে যেন কথা বা ভাষার যথার্থতা রক্ষা হয়। যা কিছু বলা হয়, ঠিক-ঠিক যেন মানে হয় তার এবং যেন কার্যকরী হয়। শান্ত সহজ উচ্চারণে কঠিন কথাও কিন্তু বলা যায়। বলতে পারেন কিংবা মনে করতে পারেন-কথা কি আর অতশত ভেবে বলা যায়? সম্ভব কি? শব্দ নির্বাচন, বাক্য ব্যবহার, ডেলিভারি এসব আবার কী কথা? অতসব ভেবে কথা বলতে গেলে তো আর কাজ চলে না। কথার মাজা-ঘষা নিয়েই থাকতে হয়। কাজকর্ম চুলোয় ওঠে! কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। তাতে বরং কাজ আরও সহজ হয়। ভাল কথায়, ভালভাবে মনের ভাব প্রকাশে কাজ অনেক ভালও হয়। আর ওই যে বলা হয়েছে, শব্দ চয়ন, বাক্য ব্যবহার, ডেলিভারি এসব যখন শৈশব থেকেই চর্চা হবে, বাড়িতে স্কুল-কলেজে এমনভাবে তা আত্মস্থ হয়ে যাবে যে, সেটা তখন স্বভাবেরই অংশ হয়ে যাবে। তাই তো স্কুলের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই মন বিকাশে, স্বভাব-চরিত্র গঠনে ছেলেমেয়েদের মানুষ হওয়ার শিক্ষাই দিতে হবে। আগে আমরা একজন মানুষ, তারপরে জ্ঞান-বিজ্ঞান যা কিছুর চর্চা আমাদের।

মানুষের মৌলিক, নৈতিক, মানবিক শিক্ষার আলোকে মনের বিকাশ ঘটাতে না পারলে শিক্ষার সমস্ত অর্জন ব্যর্থ হতে বাধ্য। মানবিক বোধহীন ব্যক্তি যতই কিনা  জ্ঞান-বিজ্ঞান কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত হোন তাকে দিয়ে সমাজের কোন মঙ্গল হয় না। সার্টিফিকেট নিয়ে নিজে হয়ত তিনি কিছু করে খেতে পারে, অপরকে ডিঙিয়ে স্বপথে-বিপথে তরতর ওপরে উঠে যেতে পারেন, কিন্তু তাতে সার্বিক মানুষের কোন মঙ্গল নেই। তাই তো সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়নে, বহির্বিশ্বে সবার সঙ্গে এগিয়ে চলতে, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিসিসি/বিহেবিহেরাল চেইঞ্জ কমিউনিকেশন তথা সুন্দর আচার-আচরণের চর্চার বিকল্প নেই। পরিবারে, সমাজে স্কুল-কলেজে যেমন, চাকরিতে ঢুকতে, প্রশিক্ষণকালীন সময়ে প্রতিটি ধাপেই দরকার-এর অনুশীলন। ‘কথা বলা’ তথা মনের ভাব প্রকাশ করার বিষয়টি যেন সত্যি-সত্যিই মানুষের মনকে নাড়া দেয়, ভাললাগায়। অপরের মনে কাটা হয়ে যেন বিঁধে না থাকে আমাদের মুখোচ্চারিত শব্দমালা।এ কথাটি স্মরণ রেখেই আমাদের সবার সামনের দিকে চলার অভ্যাস করতে হবে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয় প্রধান কার্যালয়

মারীয়া কমপ্লেক্স, কাশিপুর বাজার, বরিশাল ।

মোবাইলঃ ০১৭১৬৬০৫৯৭১, ০১৫১১০৩৬৮০৯,০১৯১১১৭০৮৮৪

মেইলঃ barishalerprohor.news.bd@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ
Web Design & Developed By
ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক

প্রতিষ্ঠাতা :
মোঃ নাছিম শরীফ


উপদেষ্টা: খালিদ মাহমুদ

মেইলঃ barishaler.prohor@yahoo.com
  • মোবাইলঃ ০১৭১১০৩৬৮০৯, ০১৯১৯০৩৬৮০৯
    • সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমুন নাহার
    • ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মোঃ রাসেল আকন
    • নির্বাহী সম্পাদক: কাজী সজল
    • বার্তা প্রধানঃ মোঃ আল আমিন হোসেন
    ডেইলি বরিশালের প্রহর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।