DailyBarishalerProhor.Com | logo

২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করুণায় নয়, নারীরা সাংসদ হতে চান সরাসরি ভোটে

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০১৯, ১২:৫৩

করুণায় নয়, নারীরা সাংসদ হতে চান সরাসরি ভোটে

বরিশালের প্রহর ডেস্ক !!  জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, নারীরা দলীয় করুণায় নয়, জনগণের ভোটে সরাসরি সাংসদ নির্বাচিত হয়ে জনগণের কথা বলতে চান। এ জন্য রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা জরুরি।

ইউএসএআইডি ও ইউকেএইডের অর্থায়নে সমকাল ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সংসদীয় সংরক্ষিত আসন’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন দশম সংসদের নারী সাংসদ হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ও মাহজাবিন খালেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রোকসানা, স্টেপস্‌ টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, নিউইয়র্ক টাইমসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলফিকার আলি মাণিক, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডাইরেক্টর ড. মো. আব্দুল আলীম এবং সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিপিকা বিশ্বাস, যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক সামসুন্নাহার রত্না ও জেদ্দা পারভীন রিমি, যুব মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন, জাতীয় পার্টির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অনন্যা হোসাইন, ত্রিপল নাইনের কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ নায়লা বারী। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের দলীয় প্রধান কেটি ক্রুক।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, সংসদের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে পদ্ধতিগত কারণে ক্ষমতা, সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির ঘাটতি থাকে। এটা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আবার সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ার কারণে সংরক্ষিত আসনের সাংসদরা বৃহত্তর নারীসমাজের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি উপলব্ধি করেন না। তাই সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রথা চালু করতে হবে। এর জন্য সরকার এবং রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে গিয়ে মুস্তাফিজ শফি বলেন, সংসদীয় নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে সব ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে এক-তৃতীয়াংশ নারীকে মনোনয়ন দেয় সে দাবিও জোরালো করতে হবে। আমরা চাই নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীবান্ধব একটি রাষ্ট্র। সবাই মিলে কাজ না করলে এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কথা অনেক হয়েছে, বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করাটাই এখন বেশি জরুরি।

হোসনে আরা ডালিয়া বলেন, সরকার আন্তরিক হলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। আওয়ামী লীগ সরকার এ লক্ষ্যে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। তবে নারীর দাবি আদায়ে নিজের লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে নারীকে। নারীর জোরালো কণ্ঠস্বর থাকতে হবে।

মাহজাবিন খালেদ বলেন, বাইরে থেকে যে যেভাবেই বলুক সংসদে পুরুষ প্রতিনিধির মতোই নারী সাংসদরা কাজ করছেন। নিজে শক্ত হয়ে দাঁড়ালে অন্যরাও তখন গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়।

কাবেরী গায়েন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করলে আলাদা করে কোটা পদ্ধতির প্রয়োজন হতো না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৬৯ জন নারী অংশগ্রহণ করেছেন। নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২২ জন। এ চিত্র হতাশার। রাজনীতিবিদদের হাতেই রাজনীতি সেইফ নেই। তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত অনেক নারী এটিকে অপমানজনক মনে করেন।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংরক্ষিত মানেই কোটা ব্যবস্থা এবং এ কোটা পদ্ধতি চালু করা হয় পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করতে। সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও আমরা তা ভাবতে পারি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যখন কোটা এবং সময় দুটিই বাড়ানো হয় তখন আমরা ঠিক বুঝতে পারি না রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে না কমছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এটা মনিটর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে তা দেখতে হবে। তিনি সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং প্রতিনিধিদের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সংরক্ষিত আসন পদ্ধতি বাতিলের দাবি করে রাজনৈতিক যোগ্যতার বিচারে নারী সাংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানান।

রোকেয়া কবীর বলেন, সমতা-বৈষম্য নিরসন-অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সার্বিক ক্ষমতায়নের জন্য অবশ্যই নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে তথ্য চেয়ে প্রতি তিন মাস পর পর রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিলে তারা চাপে থাকত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করত। তিনি বলেন, নানান কারণেই মাঠের অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেন না। স্থানীয় পাওয়ার কমিটিগুলোতেও নারী প্রতিনিধি রাখা হয় না। তাই আমি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু চলমান প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময়ে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারীদের অলঙ্কার বলা হতো। এখন ওই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা সংসদে কথা বলছেন। তিনি বলেন, সরাসরি নির্বাচনে নারীরা এখনও সুযোগ পান না। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবসহ নানান কারণে নারীদের দমিয়ে রাখা হয়। প্রার্থী যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দক্ষদের সুযোগ দেওয়া হয় না। তিনি পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিকভাবে যোগ্য নারীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

রঞ্জন কর্মকার বলেন, সংরক্ষিত আসনসহ সংসদে নারীর উপস্থিতি ২১ শতাংশের কম। নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। বৈষম্য সৃষ্টিকারী আইনের সংস্কার করতে হবে। চলমান পদ্ধতিতে সংসদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বৈষম্য কমছে না। তবে এটা স্বীকার করতে হয় তৃণমূলের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিশেষ করে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো।

গোলটেবিল বৈঠকের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে লিপিকা বিশ্বাস বলেন, তৃণমূলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল কাজ করে যাচ্ছে। কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ থাকলেও তৃণমূলের চিত্র হতাশাজনক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র দেখলেই এ হতাশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রতিনিধিদের মধ্যে মাত্র দু’জন নতুন মুখ। তাও আবার স্বামীর সূত্রে পাওয়া। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না। সাধারণ আসনে নারীরা নির্বাচনের জন্য নমিনেশন চাইলে তাদের সংরক্ষিত আসন দেখানো হয়। আবার বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় রিজার্ভ সিটে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়। তিনি জাতীয় সংসদ অথবা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে যোগ্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সমাপনী বক্তব্যে কেটি ক্রুক বলেন, সংসদে নারীর ক্ষমতায়নের ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। দীর্ঘদিন ধরেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার আন্দোলন চলছে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালও এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। আশার কথা হলো বাংলাদেশে রাজনীতির ব্যাপারে নারীর আগ্রহ বাড়ছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয় প্রধান কার্যালয়

মারীয়া কমপ্লেক্স, কাশিপুর বাজার, বরিশাল ।

মোবাইলঃ ০১৭১৬৬০৫৯৭১, ০১৫১১০৩৬৮০৯,০১৯১১১৭০৮৮৪

মেইলঃ barishalerprohor.news.bd@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ
Web Design & Developed By
ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক

প্রতিষ্ঠাতা :
মোঃ নাছিম শরীফ


উপদেষ্টা: খালিদ মাহমুদ

মেইলঃ barishaler.prohor@yahoo.com
  • মোবাইলঃ ০১৭১১০৩৬৮০৯, ০১৯১৯০৩৬৮০৯
    • সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমুন নাহার
    • ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মোঃ রাসেল আকন
    • নির্বাহী সম্পাদক: কাজী সজল
    • বার্তা প্রধানঃ মোঃ আল আমিন হোসেন
    ডেইলি বরিশালের প্রহর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।