উজিরপুর প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুর মডেল থানা সংলগ্ন উপজেলা সদরে পরিবারের সবাইকে হাত-মুখ বেঁধে মারধর করে সালাম খান নামের এক পুলিশ সদস্যের বাসায় দুর্র্ধষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা ওই পুলিশ সদস্যের বাসায় থাকা স্ত্রী, ছেলে, বৃদ্ধা শ্বাশুড়ীসহ চার জনকে পিটিয়ে আহত করেছে।
একই সাথে চিৎকারেরর শব্দে ওই পুলিশ সদস্যের বাসায় প্রতিবেশি মহিউদ্দিন খান (৩৮) ছুটে গেলে বাসার বাহিরে থাকা ডাকাতরা তাকেও পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। আহতদের মধ্যে মহিউদ্দিন উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা সদরের শিকারপুর মেজর এম এ জলিল সেতু সংলগ্ন দক্ষিন শিকারপুর গ্রামে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
তবে রহস্যজনক কারনে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল ডাকাতির বিষয়টি সংবাদকর্মীদের কাছে অস্বীকার করেছেন। বাসায় থাকা পুলিশ সদস্য সালামের স্ত্রী জাহানার বেগম জানান, চাকরির সুবাদে তার স্বামী ঝালকাঠি সদর থানায় কর্মরত রয়েছেন। বাসায় বৃদ্ধ মা ফুলবানু (৭০), ছেলে আরিফ (৩০) ও ভাতিজা সিয়াম (১৩) কে নিয়ে থাকেন।
প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার রাতেও খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দেড়টার দিকে ৫-৬ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল পাকা ভবনের লোহার গেটের তালা ও বাসার মূল দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সাবইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় আধা ঘন্টা লুটপাট চালায়। পুলিশ সদস্যর ছেলে আরিফ খান জানান, ডাকাতরা পাঁচ থেকে ছয় জন বাসার মধ্যে প্রবেশ করে বাসায় থাকা কাপড় দিয়েই মুখ বেঁধে নেয়। পরে কয়েকজন আরিফের কক্ষে ঢুকে হাত ও মুখ বেঁধে ধারালো অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে। আর ২-৩ জন তার মা ও নানীর রুমে ঢুকে তাদের সাথে থাকা স্বর্নালংকার লুট করে নেয়।
এছাড়া আরিফের নিকট থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চাবিসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা। বাধা দিয়ে ডাক-চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতরা তাদেরকে সকলকে মারধর করে। প্রতিবেশী মহিউদ্দিন জানান, রাত আনুমানিক পৌনে ২ টার দিকে সে পুলিশ সদস্য সালামের বাসায় চিৎকারের শব্দ শোনে এবং কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে ভেবে এগিয়ে যান। বাসার সামনে পৌঁছে সালামের ছেলে আরিফকে ডাক দিতেই ডাকাতরা তার ওপর হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করে। হামলার এক পর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
এদিকে পুলিশ সদস্য সালাম জানান, তার বাসায় ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সঙ্গে স্থানীয়রা জড়িত থাকতে পারে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অপরদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, সালামের বাসায় ডাকাতির ঘটনাটি আশপাশের অনেকেই টের পেয়েছেন। ভয়ে কেউ ঘরের বাইরে বের হননি। তবে প্রতিবেশীদের অনেকেই উজিরপুর থানা পুলিশকে জানাতে ওসি’র মোবাইলে কমপক্ষে ৩০ বার ফোন দিলেও তিনি (ওসি) রিসিভ করেননি।
ডাকাতরা চলে যাওয়ার পরপরই থানার ওসি স্থানীয় এক বাসিন্দার ফোন রিসিভ করে বলেন, আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন ? আমি কি করবো ? সেকেন্ড অফিসারকে ফোন দেন।’ তারা আরও অভিযোগ করেন, ডাকাতরা নির্বিঘেœ চলে যাওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা পরে পুলিশ সদস্য সালামের বাসায় পরিদর্শনে আসে উজিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আ. রবসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা।
এ সময় এসআই রব সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং সকলকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনারা কি করেছেন। ডাকাত ধরে রাখেননি কেন, পুলিশ কি করবে?’ অপরদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ডাকাতরা পুলিশ সদস্য সালামের বাসায় ডাকাতি করে একই এলাকার বিরাজ চক্রবর্তীর বাসায়ও হানা দিয়েছিলো। তবে বিরাজদের বাসার মূল দরজা ভেঙে ডাকাতরা প্রবেশ করলে পরিবারের লোকজন ডাক-চিৎকার দেয়। পরে ডাকাতরা বীরদর্পে চলে যায়।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি আর পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কারনেই থানার মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই দূর্ধষ এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পালের নিকট জানতে চাইলে তিনি ডাকাতির ঘটনাটি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। থানা এলাকায় কোনো চুরি কিংবা ডাকাতি হয়নি।’
‘ঘুষ দুর্নীতির প্রমান পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না —বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান’
প্রতিষ্ঠাতা: আল আমিন,বাবুগঞ্জ(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-......বিস্তারিত