লিখেছেন:— মাওলানা কামরুল হাসান নেছারী ৷
সন্তান আদর্শবান হোক, এটা সবাই চায় ৷ আদর্শ সন্তান মা-বাবার জন্য এক মহা নিয়ামাত ৷ শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তুলতে হলে পিতা-মাতাকে পালন করতে হয় অনেক দায়িত্ব ৷ ইসলামী শরীয়ত এ ব্যাপারে যুগোপযোগী মানসম্মত দিকনির্দেশনা দিয়েছে ৷ আমাদের সমাজে অনেকেই এসব সুন্দর দিকনির্দেশনাগুলি না জানার কারণে সন্তানদেরকে বিজাতীয় ভাবধারায় বড় করে তুলছে ৷ ফলে পরিণত বয়সে সে সন্তান দ্বারা তাদের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না ৷
শৈশবে শিশুদের মন থাকে নিষ্কলুষ-নির্মল ৷ এসময় তাদেরকে যেই আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হবে, সেই আদর্শের প্রভাব সাড়া জীবন তাদের মধ্যে থেকে যাবে ৷ সে কথাটিই হাদীছ শরীফের মাঝে এভাবে বলা হয়েছে যে, প্রিয় নবীজী (দ:) ইরশাদ করেছেন:
“প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে” [ছহীহ্ বুখারী শরীফ : ১৩৫৮]।
এখান থেকেও আমরা বুঝতে পারি যে, সন্তানকে পিতা-মাতা যেভাবে গড়ে তুলবেন, সন্তান সেভাবেই গঠিত হবে। সন্তানদের প্রতি আমাদের যেই দায়িত্বগুলি রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. কানে আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বযে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে,
আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি [ছুনান আবূ দাউদ শরীফ, হাদীছ নং:৫১০৫]
২. সুন্দর নাম রাখা : বাচ্চার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নাম অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। [ছুনান আবু দাউদ শরীফ, হাদীছ নং: ৪৯৫২-৪৯৬১]
৩. আক্বিকা করা : ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকীকা করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ করা। হাদীছ শরীফে এসেছে,
ছামুরাহ্ রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রছূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, সকল নবজাতক তার আক্বীকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। [ছুনান আবূ দাউদ শরীফ, হাদীছ নং: ২৮৩৮]
৪. ছদাকাহ্ করা : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য ছদাকাহ্ করা ছুন্নাত। হযরত আলী রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম হাছান রা. এর পক্ষ থেকে ১টি বকরী আকীকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতিমা ! তার মাথা মুণ্ডন কর এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য ছদাকাহ্ কর। [ছুনান আত-তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং: ১৫১৯] এছাড়া রছূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক এবং বারকাতের জন্য দু‘আ করতেন। [ছহীহ বুখারী শরীফ,হাদীছ নং: ৩৯০৯; ছহীহ্ মুছলিম শরীফ, হাদীছ নং: ২১৪৬]
৫. খাতনা করা : ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। হাদীছ শরীফে এসেছে,
হযরত জাবির রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাছান এবং হুছাইন রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং খাতনা করিয়েছেন। [আল-মু‘জামুল আওছাত লিত ত্ববারনী, হাদীছ নং: ৬৭০৮]
৬. আল্লাহর পরিচয় শিক্ষা দেয়া : শিশু যখন কথা বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর পরিচয় শিক্ষা দিতে হবে। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম ইবনে আব্বাছ রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘
হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সহযোগিতা চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ! যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে। [ ছুনান তিরমিযী শরীফ, হাদীছ নং: ২৫১৬]
৭. পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দান করা : ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শরীফ শিক্ষা করা ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআন শরীফের জ্ঞান দাও। [জামিউল কাবীর]
কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ [ছহীহ বুখারী শরীফ, হাদীছ নং:৫০২৭]
৮. নামাজ শিক্ষা দেয়া ও নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করা :এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা-মাতা তার সন্তানকে নামাজ শিক্ষা দিবেন এবং নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। হাদীছ শরীফে এসেছে,
হযরত আমর ইবনে শূয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সলাতের জন্য মৃদু প্রহার কর এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো। [ছুনান আবূ দাউদ শরীফ,হাদীছ নং : ৪৯৫]
৯. আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : সন্তানদের আচরণ শিক্ষা দেয়া পিতামাতার উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বললেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ [ সূরা লুকমান,আয়াত নং: ১৮,১৯]
১০.আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া : সন্তানদেরকে স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমারতো দশটি সন্তান কিন্তু আমিতো কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর স্নেহ করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যের প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না। [ছহীহ বুখারী শরীফ, হাদীছ নং: ৫৯৯৭]
১১. দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। কারণ দ্বীনি ইলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদীসে এসেছে-
হযরত আনাছ বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয। [সুনান ইবন মাজাহ শরীফ,হাদীছ নং: ২২৪]
১২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা :সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে।
উম্মে ছালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। [ছহীহ বুখারী শরীফ, হাদীছ নং: ৫৩৬৯]
১৩. সক্ষম করে তোলা : সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন,
তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [ছহীহ বুখারী শরীফ:১২৯৫]
১৪. বিবাহ দেয়া : ছুন্নাহ সম্মত পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা এবং উপযুক্ত সময়ে বিবাহর ব্যবস্থা করা। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। [জামিউল কাবীর]
১৫. দ্বীনের পথে পরিচালিত করা : পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান পালনের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করে তোলা। কুরআনে এসেছে,
‘ বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই’। [সূরা ইউসুফ : ১০৮]
সন্তানকে দ্বীনের পথে পরিচালনার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার এক বিরাট সুযোগ রয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,
তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম। [ছহীহ বুখারী শরীফ]
১৬. সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা : সন্তানগণ পিতামাতার কাছ থেকে ইনসাফ আশা করে এবং তাদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে ইনসাফ করো’। [ছহীহ বুখারী শরীফ,হাদীছ নং: ২৫৮৭]
১৭. ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা : ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কুরআনে এসেছে,
হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। [সূরা আত-তাহরীম,আয়াত নং-৬]
আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম আসসিজদাহ,আয়াত নং-২৯ ]
১৮. পাপকাজ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা : সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাই পিতা-মাতাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। [সূরা তাগাবুন,আয়াত নং-১৪]
হাদীসে এসেছে,
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। [ছহীহ বুখারী শরীফ, হাদীছ নং:৫৮৮৫]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। [ছুনান আবূ দাউদ শরীফ, হাদীছ নং:৪০৩১]
১৯. দু‘আ করা : আমাদের সন্তানদের জন্য দু‘আ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে,
আল্লাহর নেক বান্দা তারাই যারা বলে,
হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। [সূরা আলফুরকান,আয়াত নং-৭৪]
হযরত যাকারিয়্যা আলাইহিছ ছালাম আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছিলেন,
‘হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। [সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং: ৩৮]
সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ, আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন করতে পেরেছি বা পারছি ? আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসাবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-
১. সদকায়ে জারিয়া
২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে [ছহীহ মুছলিম শরীফ, হাদীছ নং:১৬৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সন্তানদেরকে কবুল করুন,
তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
‘ঘুষ দুর্নীতির প্রমান পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না —বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান’
প্রতিষ্ঠাতা: আল আমিন,বাবুগঞ্জ(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-......বিস্তারিত