এইচ এম লাহেল মাহমুদ, পিরোজপুর : পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে বর্ষার সম্বল নৌকার হাট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই এ অঞ্চলের মানুষ চলাচলের জন্য নির্ভরযোগ্য বাহন হিসাবে ব্যবহার করেন নৌকা। শুধু যাতায়াত আর পন্য পরিবহণ নয়, দক্ষিন অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষেরা মৎস্য শিকারের কাজে এ নৌকা ব্যাবহার করছেন। আর তা ক্রয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য হাট হিসাবে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার পাঁচপাড়া বাজার ব্যাপক পরিচিত।
জেলায় সবচেয়ে বেশি নৌকা তৈরি হয় স্বরূপকাঠী উপজেলার শেখেরহাট, পঞ্চবেকি, বেগুলি, ডুবিরহাট, কুড়িয়ানা, দলহার, আতা, একতা গ্রামে। নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী , বাঁশবাড়িয়া , সাচীয়া দেউলবাড়ি, কলারদোয়ানিয়া গ্রামে। এসব এলাকার শত শত কারিগর সারা বছর ধরে নৌকা তেরি করে তা বর্ষাকালে বিক্রি করেন।
জেলার সদর উপজেলার পাঁচপাড়ার নৌকার হাট সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার এ দুইদিন হাট বসলেও আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে হাটের দিনগুলোতে নৌকা বেচাকেনা হয় বেশি। নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী, দেউলবাড়ি ও কলারদোয়ানিয়া এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মিস্ত্রি সারা বছর ধরে তৈরি নৌকা এ সময় তারা বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে নৌকায় জাল, চাই বা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকারে ছোটেন স্থানীয় জেলেরা। এসময় জেলার স্বরূপকাঠী ও নাজিরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নৌকায় বসে ফেরি করে বেচাকেনা হয় তরিতরকারিসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নানা পণ্য। তাই সারা বছরই এখানে নৌকার চলাচল থাকে। তবে বর্ষার মৌসুমে এখানে নৌকার কদর বেড়ে যায়। এসময় এ এলাকার অনেকেই নৌকা তৈরি ও তা বিক্রি করে তাদের সারা বছরের জীবিকা নির্বাহের টাকা আয় করেন বলে জানান স্থানীয় নৌকা তৈরির মিস্ত্রী শ্যামল রায়।
জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি নৌকা বেচাকেনা হয় বলে জানা গেছে। আর এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এর হাট বসে। এ উপজেলার কুরিয়ানা বাজারে প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধিক নৌকা বেচাকেনা হয় বলে স্থানীয় নৌকা প্রস্তুত কারক শহিদুল ইসলাম জানান। তিনি জানান, আমাদের কাছ থেকে এ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠী ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু পাইকার এসব নৌকা তৈরির জন্য অগ্রিম অর্ডার দেন। পরে তারা এ সব নৌকা তাদের নিজেদের এলাকায় বিক্রি করেন।
নৌকা বিক্রেতা অনিল চন্দ্র দাস বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কমদামি নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে। স্বরূপকাঠীর আটঘর কুরিয়ানা নদীতে নতুন তৈরি করা এসব নৌকার ভাসমান হাট বসে।
স্থানীয় বিক্রেতারা জানান, বর্ষার মৌসুমে চারিদিকে পানি থাকার সময় কৃষিকাজের জন্য মানুষ যাতায়াত করতে এ সব নৌকা ক্রয় করে থাাকেন। স্থানীয়রা এসব নৌকাকে পোষা নৌকা; কেউ কেউ আবার কোষা নাও বলেও বলে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য স্থানীয়দের প্রধান বাহনই এ নৌকা।
নৌকার এসব হাট ঘুরে দেখা গেছে, এ যেন এক নৌকার রাজ্য। আধুনিক সময়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকার রাজত্ব থাকলেও এখানকার মানুষের কাছে এ নৌকার কদর শত শত বছর থেকে শুরু হয়ে এখনো রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর খালে ও রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে দক্ষিনবঙ্গের বৃহত্তম এ নৌকার হাট। ঝালকাঠী জেলার পাষন্ডা গ্রাম থেকে আসা নৌকার মিস্ত্রি আশুতোষ রায় বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এ নৌকার হাটে আসেন।
ওই মিস্ত্রি আরো জানান, নৌকার আকার ও প্রকার ভেদে ৭ শ’থেকে ৫ হাজার টাকা দামের নৌকা উঠে এ হাটে। আমড়া, আম, রেন্ট্রি, কড়াই, ও চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এসব নৌকা।
হাটে আসা নৌকা ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, বর্ষা মৌসুমে স্থানীয়রা নৌকাকে তাদের নির্ভরযোগ্য বাহন হিসাবে ব্যবহার করেন। তা ছাড়া স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশের বিখ্যাত কুড়িয়ানার পেয়ারা, আমড়া, চাই দিয়ে মাছ ধরাসহ গো-খাদ্য সংগ্রহে নৌকা ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয় নৌকার মিস্ত্রী সুনিয় রঞ্জন নাগ জানান, একটি পেনিস নৌকা তৈরি করতে এক থেকে দেড় দিন সময় লাগে। আর তা তৈরিতে কাঠ ও মজুরি মিলে ৬ থেকে ৭ শ’টাকা খরচ হয়। যা বিক্রি করলে ৪ থেকে ৫ শ’টাকা লাভ থাকে।
উপজেলার চামী গ্রাম থেকে আসা নৌকা ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, ৩০ বছর ধরে তিনি এ হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসেন। প্রতি জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ হাটে নৌকা বেচাকেনা হয়। আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে নৌকা বেচাকেনার ধুম পড়ে। এ সময় চরাঞ্চলের মানুষেরা তাদের যাতায়াত, ফসল তোলা, শাপলা তোলা, মাছ ধরার চাই পাতা, গরুর খাদ্য সংগ্রহসহ নানা কাজে নৌকা ব্যবহার করেন।
হাটে আসা নৌকা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা স্থানীয় স্বরূপকাঠী, মিয়ারহাট ও ইন্দুরহাট থেকে এসব নৌকা তৈরির কাঠ কিনেন। আবার কেউ কেউ সুবিধামত স্থানীয় গ্রাম থেকে এসব কাঠ কেনেন বলে জানান।
জানা গেছে, জেলার নৌকা বেচা-কেনার এ হাটে স্থানীয় শেকেরহাট, পঞ্চবেকি, বেগুলি, ডুবিরহাট, কুড়িয়ানা, দলহার, আতা, একতা গ্রামের মিস্ত্রিরা নৌকা তৈরিতে পারদর্শী।
জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার কুড়িয়ানা বাজারের নৌকা বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ইজারাদারদের চাহিদা খুব বেশি হওয়ায় বিক্রেতা ও কারিগররা তাদের মুনফা ঠিকমতো ভোগ করতে পারছেন না। তবে স্থানীয় ইজারাদাররা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা জানান, নৌকা বিক্রি করতে আসা মিস্ত্রিদের দেয়া টাকার উপর আমরা কখনো কোন জুলুম করি না।
‘ঘুষ দুর্নীতির প্রমান পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না —বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান’
প্রতিষ্ঠাতা: আল আমিন,বাবুগঞ্জ(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-......বিস্তারিত