DailyBarishalerProhor.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার প্রাকৃতির সৌন্দর্য ও উপকূলের মানচিত্র গিলে খাচ্ছে আগ্রাসী সমুদ্র। বঙ্গোপসাগরের ভয়াল আগ্রাসন কুয়াকাটার বাসিন্দাদের মনে বাস্তুচ্যুত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীরা হতাশায় ডুবতে বসেছেন।

চলতি বর্ষা মৌসুমে স্মরণকালের ভয়াবহ ভাঙনে কুয়াকাটা সৈকতের সামগ্রিক অবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটেছে। পাশাপাশি কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ফেরি পারাপারের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর খবর তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে সড়কপথের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অনেকের অভিমত।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন কুয়াকাটা হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহআলম হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের তীব্র ভাঙন এবং সড়কে যত্রতত্র খানাখন্দ থাকায় দূরের পর্যটকরা সড়কপথে নিরাপদে আসতে পারেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন। তীব্র ভাঙনের ফলে কুয়াকাটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলীন হওয়ার পথে। ফলে কুয়াকাটা থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

কুয়াকাটার একাধিক ব্যবসায়ীদের মতে সবকিছুর খেসারত শেষ পর্যন্ত কুয়াকাটার প্রান্তিক ব্যবসায়ীদেরই দিতে হচ্ছে। লোকসানে পড়েছেন কুয়াকাটায় আবাসনে বিনিয়োগের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।

সৈকতজুড়ে ভাঙনের তাণ্ডব

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বর্ষায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দুই পাশে অন্তত আড়াই কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জো এর প্রকোপে সবুজাভ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য এবং পর্যটনের পুরনো জৌলুস ইতিমধ্যে অনেকটা হারিয়েছে। ঢেউয়ের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়েছে একাধিক পাকা ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সাগরবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে নারিকেল বীথি, তালবন, ঝাউবন, শালবন, কড়ইবনসহ অসংখ্য গাছপালা।

সম্প্রতি কয়েক দফা জোয়ারের তাণ্ডবে অন্তত ১০০ ফুট প্রস্থ সৈকতের দীর্ঘ বেলাভূমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে কুয়াকাটার গোটা সমুদ্র সৈকত। সৈকতে থাকা আবাসিক ‘হোটেল কিংস’ এর মূল ভবন ভেঙে গেছে। সৈকতে যাওয়ার শূন্য পয়েন্টের সড়কটি জোয়ারে ভেসে গেছে।

পশ্চিম কুয়াকাটা মিরাবাড়ি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের স্লোপসহ মূল বাঁধের এক তৃতীয়াংশ জোয়ারের তোড়ে ভেঙে গেছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া জোয়ারের ঝাপটা প্রতিরোধের জিও টেক্সটাইলের ব্যাগ পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি, সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন মূল বাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

জোয়ারের সময় আতঙ্ক

কুয়াকাটা সৈকতের পাবলিক টয়লেটের কেয়ারটেকার ও কুয়াকাটা পৌরসভার কর্মচারী আবদুল হালিম মৃধা জানান, সম্প্রতি কয়েক দফা জোয়ারের সঙ্গে প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় অন্তত ১০০ ফুট সৈকত সমুদ্র ভেঙে নিয়ে গেছে। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা। মোটকথা দফায় দফায় তাণ্ডবে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দৃষ্টিনন্দন সৈকত এখন অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো’ আতঙ্কে রয়েছে। আর ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় কুয়াকাটার বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়।

কুয়াকাটার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওশান গ্রুপের এমডি ড. খন্দকার আলী আজম বলেন, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতের বেলাভূমের ক্ষয়রোধে স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া জরুরি। একইসঙ্গে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে মহাসড়কের একাধিক স্থানে খানাখন্দ রয়েছে। এর ফলে কুয়াকাটার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। এখনই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হবে।

সৈকতের ভাঙনরোধে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে কুয়াকাটায় কয়েক দফা নানা পেশাজীবীদের উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। একই দাবিতে কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লবের নেতৃত্বে ঢাকার ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ৮০০ মিটার এলাকা সাগরের ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে তিন স্তরে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটা প্রতিরোধে কাজ চলছে। এজন্য ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়-বরাদ্দের কথাও জানান তিনি। সাগরের অব্যাহত তীব্র ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন এ বছর অনিশ্চিত হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাঠানো সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানোর ফলে এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলেও জানান পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী। ফলে ঢেউয়ের ঝাপটা রোধে জরুরি ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, দুই মাসে কোথাও কোথাও প্রায় ১০০ ফুট সৈকতের প্রস্থ সাগর গিলে খেয়েছে। এখন কুয়াকাটা পৌর এলাকাসহ পর্যটন এলাকার মানুষ ও তাদের সম্পদসহ সব ধরনের স্থাপনা রক্ষায় বেড়িবাঁধটিও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধের রিভার সাইটের স্লোপসহ মূল বাঁধ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়; যা অনুমোদন শেষে চলতি বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরুর সম্ভাবনা ছিল। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয়-বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত এলাকা নিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকা ছিল। পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে সৈকত রক্ষায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা ছিল; কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ফের বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া জরুরি ভিত্তিতে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ৮০০ মিটার এলাকা সাগরের ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে তিন স্তরে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটা প্রতিরোধে কাজ চালানোর এমন উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলে সৈকতের শূন্য পয়েন্টের কিছু এলাকা ঢেউয়ের তাণ্ডব থেকে এ বছর রক্ষা পাচ্ছে বলে অনুমান করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এসবের পরও দীর্ঘ সৈকত এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয় প্রধান কার্যালয়

মারীয়া কমপ্লেক্স, কাশিপুর বাজার, বরিশাল ।

মোবাইলঃ ০১৭১৬৬০৫৯৭১, ০১৫১১০৩৬৮০৯,০১৯১১১৭০৮৮৪

মেইলঃ barishalerprohor.news.bd@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ
Web Design & Developed By
ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক

প্রতিষ্ঠাতা :
মোঃ নাছিম শরীফ


উপদেষ্টা: খালিদ মাহমুদ

মেইলঃ barishaler.prohor@yahoo.com
  • মোবাইলঃ ০১৭১১০৩৬৮০৯, ০১৯১৯০৩৬৮০৯
    • সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমুন নাহার
    • ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মোঃ রাসেল আকন
    • নির্বাহী সম্পাদক: কাজী সজল
    • বার্তা প্রধানঃ মোঃ আল আমিন হোসেন
    ডেইলি বরিশালের প্রহর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।